হবিগঞ্জ পৌরসভার নতুন অর্থবছরের জন্য ৭১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন মেয়র আতাউর রহমান সেলিম ॥ সিলেট বিভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলাবায়ূ প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সড়কবাতি খাতে বাজেটে রয়েছে ২০ কোটি টাকা ॥ নিজেস্ব তহবিল হতে পুরাতন খোয়ই নদী পরিস্কারসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কাজে ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা ॥

পুরাতন খোয়াই নদী পরিস্কার ও শহর হতে পানি নিস্কশনের বড় বড় কয়েকটি খাল খনন করেছি। গুরুত্বপূর্ন ৮ টি কার্লভার্ট নির্মাণ করেছি। ফলে এই বছর ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ার পরও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি- মেয়র আতাউর রহমান সেলিম ॥

কোন করারোপ ছাড়াই নতুন অর্থবছরের ৭১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। সোমবার বেলা ১২ টায় হবিগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাজেট ঘোষণা করেন।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে মোট আয় দেখানো হয়েছে ৭০ কোটি ৯৮ লাখ ১৬ হাজার ৪শ ১২ টাকা। ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শ ৭৮ টাকা। উদ্বৃত্ত থাকবে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬ শ ৩৪ টাকা।

নিজস্ব খাতে মোট আয় ১৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার ৪শ ১২ টাকা এবং ব্যয় ১৮ কোটি ৪০ লাখ ১৮ হাজার ৭শ ৭৮ টাকা। উন্নয়ন খাতে মোট আয় ৫১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যয়ও দেখানো হয়েছে একই পরিমান টাকা।

বাজেটের উন্নয়ন খাতে সিলেট বিভাগের পৌরসভা সমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এলজিইডি’র আওতায় রাস্তা, ড্রেন ও অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি টাকা। জলবায়ূ তহবিল প্রকল্পের আওতায় সৌরচালিত সড়কবাতি স্থাপন ও ড্রেন নির্মাণ খাতে দেখানো হয়েছে ১০ কোটি টাকা। গুরুত্বপূর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেন ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২৫ পৌরসভা ওয়াটার এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন খাতে দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকা। কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকোভারী প্রকল্পের আওতায় পূর্তকাজ ও পাবলিক টয়লেট নির্মানে দেখানো হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী, এডিপি’র আওতায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

রাজস্ব ব্যয়ের খাতে উল্লেখযোগ্য হলো রাজস্ব উদ্বৃত্ত উন্নয়ন হিসেবে স্থানান্তর ৪ কোটি টাকা। পানি সরবরাহ শাখা ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ২ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৯২ টাকা। ড্রেন, খাল, বর্জ্য পরিস্কার এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের মজুরী ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যুত বিল ৪০ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬০ লাখ টাকা। ডাম্পিং সাইটের খরচ ২০ লাখ। পুরাতন খোয়াই নদী পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ৪৫ লাখ টাকা।

এছাড়াও নতুন বাজেটে রয়েছে যানজট নিরসনের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে ১৫ লাখ টাকা, বৃক্ষ রোপন ও রক্ষনাবেক্ষন ৫ লাখ টাকা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান ২০ লাখ টাকা, ভ্যানগাড়ী ক্রয় ও মেরামত ১৫ লাখ টাকা, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান ৭ লাখ টাকা ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিােত আইসিটি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান ৭ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের কর্মকর ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মেয়র সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

মেয়র বলেন,‘গত ৩ বছর ৩ মাসে হবিগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব তহবিল হতে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭ শ ৭৬ টাকার ১৬৩ টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। তিনি বলেন ‘শহরবাসীর ২০ বছরের গলার কাঁটা বাইপাসের পার্শ্ব হতে আবর্জনার পাহাড় নতুন ডাম্পিং স্টেশনে অপসারন করেছি। সাথে সাথে বাইপাসের পাশে বৃক্ষ রোপন করছি।’ শহর হতে পানি নিস্কশনের বড় বড় কয়েকটি খাল খনন করেছি। গুরুত্বপূর্ন ৮ টি কার্লভার্ট নির্মান করেছি। ফলে এই বছর ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ার পরও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর পানি যে দ্রুত গতিতে নিষ্কাশিত হয়েছে সেটি বিভিন্ন সেমিনার ও প্রচার মাধ্যমে বিশিষ্টজনেরা উল্লেখ করেছেন।’ তিনি বলেন,‘পুরোপুরি জলাবদ্ধতামুক্ত হতে গেলে আমাদেও আরো কিছু চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।’ মেয়র বলেন,‘অটোরিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রনের জন্য এবং রাস্তার শৃংখলার জন্য আমরা শহরের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছি। শীঘ্রই এই পরিস্থিতির একটি সুন্দও সমাধান ও সফলতা আসবে।’ মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন,‘পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে ৬০ টি দোকানঘর নির্মাণ করেছি। চন্দ্রনাথ পুকুরপাড় সংলগ্ন ৬৫ শতাংশ জমিতে সুপার মার্কেট নির্মান কাজ শুরু করেছি।’

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রাসেল চৌধুরী, সাবেক সভাপতিদের মাঝে এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, মোঃ ফজলুর রহমান, গোলাম মোস্তফা রফিক, এডভোকেট রহুল হাসান শরীফ, মোহাম্মদ নাহিজ, শোয়েব চৌধুরী ও মোঃ হারুনুর রশীদ চৌধুরী। এছাড়াও হবিগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসার ইকরামুল ওয়াদুদ, প্রফেসার ইলিয়াছ বখত চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা আওয়মীলীগের সহসভাপতি ডাঃ অসিত রঞ্জন দাশ, হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সজিব আলী, হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্রুপের সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায়, হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর সভাপতি মিজানুর রহমান শামীম, হবিগঞ্জ প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল বারী আওয়াল, সাবেক পৌর কমিশনার আব্দুল মোতালিব মমরাজ, প্রকৌশলী জয় কুমার রায়, প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান বাবুল, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের প্রভাষক ফখরুদ্দিন খান পারভেজসহ অন্যন্যরা।
হবিগঞ্জ পৌরসভার বাজেট ঘোষণার সময় পৌর কাউন্সিরলদেও মাঝে উপস্থিত ছিলেন মোঃ জাহির উদ্দিন, টিপু আহমেদ, শাহ সালাউদ্দিন আহাম্মদ টিটু, আলাউদ্দিন কদ্দুছ, সফিকুর রহমান সিতু, খালেদা জুয়েল ও শেখ সুমা জামান। এছাড়াও হবিগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা হবিগঞ্জ পৌরসভার আবর্জনার স্তুপ সড়িয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য এবং দীর্ঘদিনের বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়র আতাউর রহমান সেলিমকে ধন্যবাদ জানান।#

Author: imadmin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *